লালমনিরহাটের হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় লালমনিরহাটের মিশন মোড় সেনা মৈত্রী হকার্স মার্কেটের পশ্চিমে মাশরুম সেন্টারে হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ও অভিভাবকের পক্ষে মোঃ মিজানুর রহমান। এ সময় শেখ কামাল, আব্দুর রহমান, আব্দুল হালিম, আজিজুল ইসলাম, তৈয়ব আলী, আবু বক্কর, আহসানুল হাবিবসহ লালমনিরহাটের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ও অভিভাবকের পক্ষে মোঃ মিজানুর রহমান লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আমি মোঃ মিজানুর রহমান ছাত্র, অভিভাবক আপনাদের মাধ্যমে হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ দুর্নীতির ৭৫লক্ষ টাকা আত্মসাত এবং পরিবারতন্ত্র করণের অভিযোগ দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছি।
১৯৯১ইং সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলাধীন খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চর হরিণচড়া মৌজায় হরিণচড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়।
১৯৯৪ইং সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয় ২০০২ইং সালে বন্যা ও নদী ভাঙ্গার কারণে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নায়েব আলী একই ইউনিয়নের কালমাটি মৌজায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করেন প্রধান শিক্ষক নায়ের আলী কালমাটি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়ে যায়। সহকারী শিক্ষকের মধ্যে সিনিয়র হওয়ায় মোঃ মাহাবুবর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে মনোনীত করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ইং সালের ২৬ ডিসেম্বর রাতে কালমাটি হতে আবারও হরিণচড়া মৌজায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। স্থাপন করার পর সহকারী শিক্ষক ফেরদৌস, কবিরুল, কামিনী কান্ত রায় বাদী হয়ে আমিসহ ১১জনের নামে আসামী করে থানায় ও কোটে মামলা করেন। সকল মামলা আইনী ভাবে মোকাবেলা করার পর মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং পাঠদান কার্যক্রম যথারিতি চালু হয়।
ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয় কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ২০১৬ সালে সহকারী শিক্ষক কৃষি পদে আনিছুর রহসানকে নিয়োগ প্রদান করেন।
কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহাবুবর রহমান তার বন্ধু রংপুর নিবাসী উত্তম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী-কে সুকৌশলে কাউকে না জানিয়ে সভাপতি করেন। সভাপতির পরামর্শে গত ১৮/১২/২০১৬ইং তারিখে দৈনিক মানবজমিন ও প্রথম খবর পত্রিকায় অফিস সহকারী ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে ১৪জন প্রার্থী অফিস সহকারী পদে আমিসহ ১১জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদন করার পর আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার পেশি শক্তি খাটিয়ে অফিসকে ম্যানেজ করে নিজেদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদের ৩জন প্রার্থী অফিস সহকারী পদের ৩জন প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য প্রবেশপত্র প্রদান করেন। অবশিষ্ট প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাপারে কিছুই জানেনা। মোটা অংকের ঘুষ নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ মাহাবুবর রহমান অফিস সহকারী পদে মোঃ আফিয়ার রহমানকে নিয়োগ পত্র প্রদান করেন।
নিয়োগের পর চাকুরী প্রত্যাশী প্রার্থীগণ জানতে পারি যে, নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬/৭/২০১৭ইং তারিখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সদর, লালমনিরহাটসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ বাতিল চেয়ে অভিযোগ করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করি।
এদিকে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি ৭৫ (পঁচাত্তর লক্ষ) টাকা আত্মসাত ও পরিবারতান্ত্রিক করণের অভিযোগ প্রসঙ্গে এলাকাবাসীর পক্ষে আবেদনপত্র দাখিল করেছে মর্মে জানা গেছে।
অপরদিকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক, লালমনিরহাটকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় রংপুর বিভাগ, রংপুরের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইন্দ্রজীত সাহা স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করেন যে, হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি ৭৫ (পঁচাত্তর লক্ষ) টাকা আত্মসাত ও পরিবারতান্ত্রিক করণের অভিযোগ সংক্রান্ত পত্রটি তদন্তপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে এ কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।